তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কোম্পানির সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে

- আপডেট: ০৯:৫২:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৮০০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
অধূমপায়ী ও তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন: এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-র সহযোগিতায় বিএইচআরএফ এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএইচআরএফ সভাপতি রাশেদ রাব্বী।
তিনি বলেন,বিশ্বের ১৩০ কোটি তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৮০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে। তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন অধূমপায়ী রয়েছে, যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। পরোক্ষ ধূমপান প্রতি বছর ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। প্রায় অর্ধেক শিশু তামাকের ধোঁয়ায় দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়,ফলে প্রতি বছর প্রায় ৬৫ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত রোগে মারা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন,দেশে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকের ৩৫.৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী নাগরিকের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর হার ৬.৯ শতাংশ।
পরোক্ষ ধূমপানের বিষয়ে তিনি বলেন,বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। কর্মক্ষেত্রে ৪২.৭ শতাংশ,রেস্টুরেন্টে ৪৯.৭ শতাংশ এবং গণপরিবহনে ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ) পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার আরও উদ্বেগজনক—পাবলিক প্লেসে ৫৯ শতাংশ এবং বাড়িতে ৩১ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে রাশেদ রাব্বী বলেন,এর মূল লক্ষ্য হলো অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেওয়া। প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’বিলুপ্ত করে সব পাবলিক প্লেস,কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
তিনি বলেন,তামাকের বিষাক্ত ছোবল থেকে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল ও শিশুপার্কের আশপাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
রাশেদ রাব্বী এসময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির টয়লেটে তামাক ব্যবহারের বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন,ধূমপানের কারণে দেশে গর্ভপাত ও বন্ধ্যাত্বের হার বাড়ছে। নারীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতাও সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
তিনি বলেন,ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও লাগেজ পার্টির মাধ্যমে এ পণ্য দেশে ঢুকছে। বর্তমান সরকারে এমন অনেকেই আছেন যারা তামাকবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তামাকবিরোধী আইন প্রণয়নে তাদের শক্তিশালী ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা জান্নাতুল বাকিয়া কেয়া বলেন,আমাদের দেশে তামাকের ব্যবহার কমেছে বলে নানা জরিপে উঠে এসেছে। কিন্তু এই কমাটা মূলত মধ্য বা তার বেশি বয়সী সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে। তরুণদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তারা ই-সিগারেট ব্যবহার করছে,বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই এ চিত্র সবচেয়ে স্পষ্ট।
তিনি বলেন,এর মাধ্যমে তারা হিরোইজম প্রকাশ করছে। তাদের মধ্যে এমন ধারণা ছড়ানো হয়েছে যে,ই-সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ কম,তাই এটা তামাক নয়, এটা তামাক কোম্পানিগুলোর ছড়ানো ভুল তথ্য।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা.সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিষয়টি আলোচনায় আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আন্তরিক, তবে এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ও জড়িত। ফলে সরকারের কাছে অর্থের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু সরকারের এটি বোঝা উচিত—এ বছর আইন শক্তিশালী করলে পরের বছর রাজস্ব কমে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। তামাক একটি দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসের বিষয়। এর ব্যবহার বা ক্রয় সহসা কমে যাবে না।