‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কোনভাবেই স্টেকহোল্ডার হতে পারবে না তামাক কোম্পানি’

- আপডেট: ০৯:৩৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন,তামাক কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কোনভাবেই স্টেকহোল্ডার হতে পারবে না। সরকার কোন অবস্থাতেই এরকম জনস্বার্থবিরোধী কাজ করবে না। তামাক কোম্পানির নানা কূটকৌশলের কারণেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এতদিন বিলম্ব হয়েছে। আর দেরি করা যাবে না।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবিতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডর্প আয়োজিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস বিষয়ক অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তরুণদের উদ্দেশ্য করে উপদেষ্টা বলেন,যেভাবে তরুণরা বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে দূর করেছে, সেভাবে তামাককেও নির্মূল করতে হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্প’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্প’র প্রকল্প সমন্বয়কারী জেবা আফরোজা।
উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে,স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা,তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা,তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ,তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মোঃ আখতারউজ-জামান বলেন,দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ (প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন) মারা যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়। অথচ, টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিগুলো মুনাফার আশায় মিথ্যা প্রচার করে বলছে যে, লতামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে সুস্পষ্ট যে, তামাকের ব্যবহার কমলেও সরকারের রাজস্বে প্রভাব পড়ে না।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন,গত ১৩ জুলাই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের খসড়া পর্যালোচনার জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেছে যে তারা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ‘স্টেকহোল্ডার আলোচনায়’ আমন্ত্রণ জানাবে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, সরকার এখনো তামাক নিয়ন্ত্রণকে রাজস্ব আয়ের চশমা দিয়ে দেখছে। এটি কেবল গুরুতর নৈতিক ও আইনি উদ্বেগই তৈরি করছে না, বরং এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির মৌলিক দ্বন্দ্বকে উপেক্ষা করার শামিল।